কুরআন ও সহীহ হাদীসে বহু জায়গায় তাওবাহ ও ক্ষমা প্রার্থনার কথা উল্লেখিত হয়েছে এবং এর মাধ্যমে যারা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেছে, তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাহকারীদের ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন’ (সূরা আল-বাকারাহ : ২২২) ।
আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لَلّٰهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِيْنَ يَتُوبُ إِلَيْهِ، مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلَاةٍ، فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ، فَأَيِسَ مِنْهَا، فَأَتَى شَجَرَةً، فَاضْطَجَعَ فِي ظِلِّهَا، قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ، فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا، قَائِمَةً عِنْدَهُ، فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا، ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ : اَللّٰهُمَّ أَنْتَ عَبْدِيْ وَأَنَا رَبُّكَ، أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ"
‘বান্দা যখন আল্লাহর নিকট তাওবাহ করে তখন তিনি তার তাওবায় ঐ ব্যক্তির চাইতেও বেশি খুশি হন যে নিজ বাহনের উপর মরুভূমীতে সফররত অবস্থায় ছিল, হঠাৎ তার সাওয়ারী হারিয়ে যায়, এমনকি তার খাবার ও পানীয় সাওয়ারীর পিঠের উপরেই ছিল। অতঃপর সন্ধান করে তা হতে নিরাশ হয়ে গিয়ে একটি গাছের তলায় এসে তার ছায়ায় শুয়ে পড়ে। এই নিরাশ অবস্থায় হঠাৎ দেখে যে, তার সাওয়ারী ফিরে এসে তার নিকট দাঁড়িয়ে আছে। তখন সে বাহনের লাগাম ধরে খুশির চোটে বলে ফেললো, হে আল্লাহ, তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার রব! সে এই ভুল অধিক খুশির কারণে করে ফেলেছিল’ (মুসলিম, হা/২৭৪৭)।
আব্দুল্লাহ মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لتَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ<
‘গুনাহ হতে তাওবাহকারী ঐ ব্যক্তির মতো হয়ে যায়, যার কোনো গুনাহই নেই’ (ইবনু মাজাহ, হা/৪২৫০)।
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
كُلُّ ابْنِ آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ الخَطَّائِيْنَ التَّوَّابُوْنَ
‘প্রত্যেক আদম সন্তান ভুল করে থাকে, আর ভুলকারীদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে তাওবাহ করে নেয়’ (তিরমিযী, হা/২৪৯৯)।
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَوْ لَمْ تُذْنِبُوْا لَذَهَبَ اللهُ بِكُمْ، وَلَجَاءَ بِقَوْمٍ يُذْنِبُوْنَ، فَيَسْتَغْفِرُوْنَ اللهَ فَيَغْفِرُ لَهُمْ
আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা যদি গুনাহ না করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদের সরিয়ে দিয়ে এমন এক জাতিকে নিয়ে আসবেন, যারা গুনাহ করে মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, তখন তিনি তাদের ক্ষমা করবেন’ (মুসলিম, হা/২৭৪৯)।
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
وَاللهِ إِنِّىْ لَأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ فِى الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِيْنَ مَرَّةً
‘আল্লাহর শপথ! আমি আল্লাহরর নিকট প্রতিদিন সত্তর বারের বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাওবাহ করি’ (বুখারী, হা/৬৩০৭)।
উল্লিখিত হাদীসসমূহ দ্বারা জানা যায় যে, পাপী ব্যক্তি তাওবাহ ও ক্ষমাক্ষামা প্রার্থনার মাধ্যমে নিজ গুনাহের বোঝা থেকে মুক্ত হতে পারে। তারপর যত বেশি সৎ কাজ করবে তার দ্বারা সে আল্লাহর তত বেশি নৈকট্য লাভ করতে পারবে। এভাবে যখন সে মহান আল্লাহর নিকট কোনো কিছু চায় তখন তার দু‘আ আল্লাহ কবুল করে নেন।
অনুরূপ যদি কোনো ব্যক্তি নিজ গুনাহ হতে তাওবাহ ও ক্ষমা প্রার্থনা করার পরিবর্তে তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ), তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ) ও তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) পাঠ করে, তাহলে সে নিজ অবস্থার প্রেক্ষাপটে অনুপযুক্ত কাজ করল।